:: লুৎফর আহম্মেদ লিটন :: “শুদ্ধাচার মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। শুদ্ধাচার বেশ গম্ভীর একটি শব্দ। শুদ্ধ+আচার=শুদ্ধাচার। এর অর্থ চরিত্রনিষ্ঠা। সাধারণত ‘নৈতিকতা ও সততা’ দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ সাধনকে শুদ্ধাচার বলা হয়। যার দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদণ্ড, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্য বোঝানো হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্য নিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্র নিষ্ঠা।”
শিশুরা যদি সত্যিকারের শুদ্ধচারী হতে পারে তাহলে ভবিষ্যতের সমাজ ও রাষ্ট্র হবে দর্পণের মতো স্বচ্ছ। শুদ্ধাচারই পারে মানুষের নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধন করতে। পারে সুন্দর সমাজ গড়তে।
শিশু মনে এই শুদ্ধাচার সৃষ্টিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো কাজ করে যাচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে শিশুদের নৈতিক জ্ঞানদানের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মোতাবেক নানা কার্যক্রম চালু করেছে। যেমন সততা স্টোর, মানবতার দেয়াল, কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের বক্স ইত্যাদি।
এখন আলোচনা করা যাক সততা স্টোর, মানবতার দেয়াল, কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের বক্স কী করে শিশুমনে শুদ্ধাচার সৃষ্টি করবে।
সততা স্টোরঃ এটি স্কুলে এমন একটি দোকান যে যার কোন বিক্রেতা থাকে না। শিশুরা নিজেই নিজের পছন্দমত জিনিস কিনে তার মূল্য নির্দিষ্ট স্থানে রেখে যাবে এবং তা নিজেই রেজিস্টারে উল্লেখ করবে। এ ভাবে তাদের ভিতর সততার মনোভাব সৃষ্টি হবে।
মানবতার দেয়ালঃ এই দেয়ালে শিশুরা তাদের অপ্রয়োজনীয় পোশাক রেখে যাবে। আবার যাদের প্রয়োজন তারা এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পোশাক নিয়ে যাবে। মানবতার দেয়ালের এই চর্চা শিশুদের ছোট বেলা থেকেই দানশীল মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করবে।
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের বক্সঃ এই বক্সে শিশুরা বিদ্যালয় অঙ্গণে কুড়িয়ে পাওয়া কোনো জিনিস রেখে দিবে। ফলে ঐ জিনিসটির মালিক যে শিশু সে অনায়াসে তা পেয়ে যাবে।
শুদ্ধাচার চর্চার এসব অনুশীলন ছাড়াও শিশুদের নৈতিকতা বৃদ্ধিতে বিদ্যালয় গুলোতে বিভিন্ন নীতি বাক্যের শ্লোগান দৈনিক সমাবেশে দেয়া হয়ে থাকে নিয়মিত।
প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর কাবিং কার্যক্রমও শুদ্ধাচার সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
“শুদ্ধাচারী হতে হলে নৈতিক গুণের অধিকারী হতেই হবে। নৈতিকতার ‘উৎস’ কিন্তু বিবেকের মধ্যেই রয়েছে। বিবেক বলতে নিজের জন্য যা প্রত্যাশা, অন্যের জন্যও তাই চাওয়া। বিবেকের তাড়নায় তাড়িত হয়ে ভালো কাজ করতে, সৎপথে চলতে মানুষ উৎসাহিত হয়। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ, পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ঠ জিনিসটি পেতে চায়। বর্ণ, রং, উচ্চতা, চিন্তাশক্তি, আকৃতি, গঠনভেদে মানুষ আলাদা হলেও আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে সব মানুষের চাওয়া অভিন্ন। মন্দ জিনিসটি নিজের জন্য নিতে চায় না, সবাই ভালোটি পেতে চায়। কেউ চায় না তার সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহার করুক কিংবা কেউ তার ক্ষতি করুক। নৈতিকতা হলো মানুষের মনের এই নিরন্তর চাওয়া-পাওয়ার নীতি। নৈতিকতার চর্চা আমাদের অন্যের প্রতি যত্নশীল, সহমর্মী, দয়ালু ও অন্যের অধিকার বজায় রাখার ও অন্যের ক্ষতি হতে বিরত থাকার শিক্ষা দেয়। প্রেরণা যোগায় সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করার।
নৈতিকতা থেকে উৎসারিত হয় সৎসাহস, দেশপ্রেম সত্যবাদিতা ও দৃঢ় প্রত্যয়। যা একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং শুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম শর্ত।”
যদিও একজন শিশুর শুদ্ধাচারের হাতেখড়ি পরিবারেই হওয়া উচিত। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেটা নাও হতে পারে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের দেশের শিশুদের সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে। শিক্ষক যদি শিশুদের প্রতি যত্নবান হন তবে এর ফসল ঘরে উঠবেই।
লেখক: লুৎফর আহম্মেদ লিটন, প্রধান শিক্ষক, কুর্শামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, লালমনিরহাট। ও (জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ এ লালমনিরহাট জেলা পর্যায় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক) প্রাপ্ত।